আরে ভাই ও বোনেরা, কেমন আছেন সবাই? মালদ্বীপের নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল জলরাশি আর বিলাসবহুল রিসোর্টের স্বপ্নীল ছবি, তাই না? কিন্তু এই স্বর্গীয় দ্বীপপুঞ্জ শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েই মন জয় করছে না, তারা তাদের বিপুল পর্যটন আয়কে কীভাবে ব্যবহার করছে, সে সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি?
জানেন কি, দেশের জিডিপির প্রায় ৭০% আসে এই খাত থেকে? আমি তো নিজে মালদ্বীপ ঘুরে এসে দেখেছি, শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করাই নয়, তারা এই বিশাল অর্থ দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলছে দারুণ সব উপায়ে!
টেকসই পর্যটন, স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার, এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা—সবকিছুতেই তারা এগিয়ে। আসুন, এই চমৎকার কৌশলের পেছনের গল্প ও আরও অনেক অজানা তথ্য এবার বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পর্যটনের শক্তিশালী ভিত্তি: কীভাবে মালদ্বীপ এত সফল হলো?

প্রাচুর্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ব্যতিক্রমী আতিথেয়তা
মালদ্বীপের সাফল্যের পেছনে প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো এর অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপ, অদূষিত নীল জলরাশি, আর শ্বাসরুদ্ধকর সূর্যাস্ত বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। আমি যখন প্রথম মালদ্বীপে গিয়েছিলাম, সেখানকার সমুদ্রের রঙ আর পরিষ্কার জল দেখে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন কোনো ছবির জগতে এসে পড়েছি!
এখানে প্রায় ১,২০০টি ছোট-বড় দ্বীপ আছে, যার মধ্যে মাত্র ২২০টি দ্বীপে মানুষ বাস করে। বাকি দ্বীপগুলো যেন প্রকৃতি তার নিজের হাতে সাজিয়ে রেখেছে। রিসোর্টগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে প্রতিটি দ্বীপ যেন একটি ব্যক্তিগত স্বর্গ। ১৯৭২ সালে মাত্র দুটি রিসোর্ট দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, এখন সেই সংখ্যা ১৮০ ছাড়িয়েছে। মালদ্বীপ সরকার এবং বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই খাতটি এখন বিশ্বসেরা। পর্যটকদের জন্য উচ্চমানের সেবা এবং আতিথেয়তার কোনো আপস নেই এখানে। প্রতিটি হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার এবং পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে সরকারি পরিদর্শকরা নিয়মিত তদারকি করেন। অনিয়ম পেলে প্রথমে সতর্ক করা হয়, তারপরও উন্নতি না হলে ব্যবসা বন্ধ করে আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়!
এই কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা আর মানের প্রতি অঙ্গীকারই পর্যটকদের বারবার এখানে ফিরিয়ে আনে। এমনকি, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় যখন পুরো বিশ্ব স্তব্ধ ছিল, মালদ্বীপ তখন ‘ওয়ার্ল্ড বেস্ট ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।
কৌশলগত নীতি এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতা
মালদ্বীপের পর্যটন খাতের এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে সরকারের অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও পর্যটন-বান্ধব নীতিমালা। সরকার পর্যটন শিল্পকে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তবে কিছু নির্দিষ্ট নীতি ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এই “একটি দ্বীপ একটি রিসোর্ট” ধারণাটি মালদ্বীপের পর্যটনকে বিশ্বজুড়ে অনন্য করে তুলেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নির্দ্বিধায় এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন, কারণ সরকার তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোনো হস্তক্ষেপ করে না। এই ধরনের নীতিমালার কারণেই বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় ৯৫%। এছাড়া, মালদ্বীপ ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকারের মতো সুবিধাও দেয়, যা পর্যটকদের জন্য ভ্রমণকে আরও সহজ করে তোলে। আমি নিজে দেখেছি, কীভাবে সুপরিকল্পিতভাবে প্রতিটি রিসোর্ট দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখে তৈরি করা হয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয় দেশটিকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্লাব সেল্টাভিগোর সঙ্গেও চুক্তি করেছে, যেখানে তাদের জার্সিতে “ভিজিট মালদ্বীপ” স্লোগান ব্যবহার করা হয়। এসব উদ্যোগের ফলে দেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান প্রায় ৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা truly remarkable!
পর্যটন আয়ের সঠিক ব্যবহার: কেমন হচ্ছে উন্নয়ন?
অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিকীকরণ
পর্যটন থেকে অর্জিত বিশাল আয় মালদ্বীপের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনি যদি মালে এবং হুলহুমালে ঘুরে দেখেন, তাহলে দেখবেন বেশিরভাগ বাড়ি তিনতলা, রাস্তাঘাট ঝকঝকে তকতকে, আর চারপাশে কোনো আবর্জনা নেই। এখানে নগরের ভেতরে চলাচলের জন্য বাস এবং ফেরি ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিটি আবাসিক এলাকায় পার্ক ও শিশুদের খেলার জায়গার সুব্যবস্থা আছে। এসবই সম্ভব হয়েছে পর্যটন থেকে আসা অর্থের কারণে। এই অর্থ ব্যবহার করে আধুনিক বিমানবন্দর, বন্দর এবং অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে পর্যটন করের রাজস্ব ব্যয় করা হয়। আমি যখন মালেতে ছিলাম, দেখেছিলাম কীভাবে বিমানবন্দর থেকে পর্যটকদের বিভিন্ন দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়াটার বাস, স্পিডবোট এবং ফেরির সুব্যবস্থা আছে। এই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যটকদের জন্য যেমন সুবিধা তৈরি করে, তেমনই স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা
মালদ্বীপ একটি নিচু দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকিতে রয়েছে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পর্যটন আয় একটি প্রধান হাতিয়ার। পর্যটন থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যেমন, তারা রাস মালে নামে একটি ইকো-সিটি নির্মাণ করছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন মিটার উঁচুতে তৈরি হচ্ছে। এটি ভারত মহাসাগরের প্রথম ইকো-সিটি। এছাড়া, পরিবেশ দূষণ কমাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, প্রবাল ও কোরাল রক্ষা করা এবং সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করা হচ্ছে। আমি দেখেছি, স্থানীয়রা পরিবেশ সম্পর্কে কতটা সচেতন। তাদের মধ্যে পর্যটন সচেতনতা অনেক বেশি, যার কারণে অপরাধের মাত্রাও বেশ কম। মালদ্বীপ সরকার বিশ্বাস করে, পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া পর্যটন দীর্ঘমেয়াদী হবে না। তাই তারা টেকসই পর্যটন নীতিমালার ওপর জোর দেয়। এই উদ্যোগগুলো শুধুমাত্র দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষাই নয়, বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতেও সাহায্য করছে।
স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার ও কর্মসংস্থান
সরাসরি ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি
পর্যটন খাত মালদ্বীপের অর্থনীতিতে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, গাইড সার্ভিস – সবখানেই স্থানীয়দের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেরও বিকাশ ঘটছে। হস্তশিল্প, মাদুর বোনা, গয়না তৈরি, টুনা মাছ প্রক্রিয়াকরণ—এসব ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোও পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আমি লক্ষ্য করেছি, অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকও মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পে কাজ করছেন, যা দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক। সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আইন আরও সহজ করা হয়েছে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। পর্যটন খাতে প্রায় ২০% শ্রমশক্তি নিয়োজিত আছে এবং জিডিপিতে এই খাতটির প্রায় ১০% অবদান রয়েছে।
গ্রামীণ ও দ্বীপভিত্তিক উন্নয়ন
পর্যটন আয় শুধু রাজধানী মালেতে সীমাবদ্ধ নেই, বরং স্থানীয় দ্বীপগুলোতেও এর সুফল পৌঁছাচ্ছে। ‘লোকাল আইল্যান্ড’গুলোতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা থাকায় সেসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। ছোট ছোট গেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁ এবং স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটকদের আগমনে লাভবান হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয়রা নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছে। এটি আয় বৈষম্য কমাতেও সাহায্য করে। আমি যখন স্থানীয় দ্বীপগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছি, দেখেছি যে পর্যটকদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দারুণ সচেতনতা রয়েছে। তারা বুঝতে পারে যে পর্যটকরা তাদের আয়ের উৎস, তাই অতিথিদের প্রতি তাদের আতিথেয়তাও বেশ আন্তরিক।
| খাত | পর্যটন আয়ের ব্যবহার | উদাহরণ |
|---|---|---|
| অবকাঠামো | বিমানবন্দর, রাস্তা, পরিবহন ব্যবস্থা | ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন, উন্নত ফেরি পরিষেবা |
| পরিবেশ | জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সমুদ্র সংরক্ষণ | রাস মালে ইকো-সিটি নির্মাণ, প্রবাল প্রাচীর রক্ষা |
| শিক্ষা | সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষা | দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ |
| কর্মসংস্থান | হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন খাতে চাকরি | স্থানীয়দের জন্য কাজের সুযোগ, ক্ষুদ্র ব্যবসা উন্নয়ন |
| স্বাস্থ্যসেবা | আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র | পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের উন্নত চিকিৎসা |
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতি

শিক্ষার প্রসার ও কারিগরি প্রশিক্ষণ
পর্যটন খাত থেকে আসা আয় মালদ্বীপের মানবসম্পদ উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার হার বাড়ানো এবং বিশেষ করে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মালদ্বীপে সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৭.৮৬ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এটি সম্ভব হয়েছে কারণ সরকার শিক্ষার প্রসারে বিনিয়োগ করেছে এবং মানুষকে দক্ষ করে তোলার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। পর্যটন খাতে কাজ করার জন্য দক্ষ জনবল খুবই জরুরি, আর মালদ্বীপ এই বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় যুবকদের হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ট্যুর গাইড, ডাইভিং ইনস্ট্রাক্টর ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলছে। এর ফলে শুধুমাত্র বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কমছে না, বরং স্থানীয়রা আরও ভালো আয়ের সুযোগ পাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারছে।
সামাজিক ন্যায়বিচার ও লিঙ্গ সমতা
মালদ্বীপ সরকার আয়ের বৈষম্য এবং লিঙ্গ বৈষম্য কমাতেও কাজ করছে। তারা এমন নীতিমালা প্রণয়ন করছে যা সরাসরি এই বিষয়গুলোকে মোকাবেলা করে। রাষ্ট্রপতি নাশিদ একবার বলেছিলেন, “দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো তার মানুষ…
এবং যেহেতু যেকোনো দেশে জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, নিশ্চিতভাবে তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণ উন্নয়নের গতি বাড়িয়ে দেবে।” এই কথাটি থেকে বোঝা যায়, তারা নারীদের কর্মসংস্থান এবং সামাজিক ক্ষমতায়নের দিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। পর্যটন খাতে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বেড়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে। আমি দেখেছি, অনেক নারী পর্যটন শিল্পে নানা ভূমিকায় কাজ করছেন, যা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল। এটি শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিই নয়, বরং একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনেও সাহায্য করছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: টেকসই পর্যটনের দিকে মালদ্বীপ
ইকো-ট্যুরিজম ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ
মালদ্বীপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো টেকসই পর্যটনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মাথায় রেখে তারা ইকো-ট্যুরিজমের দিকে ঝুঁকছে। এর মানে হলো, এমনভাবে পর্যটনকে বিকাশ করা, যা পরিবেশের ক্ষতি না করে বরং সংরক্ষণ করে। যেমন, তারা কোরাল ব্লিচিংয়ের মতো সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং নতুন নতুন পরিবেশবান্ধব রিসোর্ট তৈরি করছে। আমি তো শুনেছি, তারা এমন কিছু রিসোর্ট তৈরি করছে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরশক্তি ব্যবহার করা হয় এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা হয়। এটি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য!
এই উদ্যোগগুলো পর্যটকদের মধ্যেও পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব
মালদ্বীপ শুধুমাত্র নিজেদের প্রচেষ্টাতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেও নিজেদের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দাতা দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়নে মালদ্বীপকে সহায়তা করছে। এমনকি বাংলাদেশও মালদ্বীপের পর্যটন অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পর্যটন খাতকে উন্নত করতে চায়, যা থেকে বোঝা যায় মালদ্বীপ কতটা সফল। দুই দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং ইকো-ট্যুরিজম সম্প্রসারণে একসাথে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এই ধরনের সহযোগিতা মালদ্বীপকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশকে টেকসই পর্যটনের পথ দেখাবে বলে আমার বিশ্বাস। তারা শুধু সুন্দর দ্বীপই দেখাচ্ছে না, বরং শিখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে একটি উন্নত ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়া যায়।
글을মাচি며
আরে ভাই ও বোনেরা, মালদ্বীপের এই অসাধারণ গল্পটা শুনে নিশ্চয়ই আপনাদের মন ভরে গেছে! ভাবা যায়, একটা ছোট দেশ কীভাবে এত চমৎকারভাবে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে? আমার তো মনে হয়, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শুধু বিলাসবহুল রিসোর্টই নয়, তারা যে পরিবেশ সংরক্ষণ আর স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এত যত্নশীল, সেটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আশা করি, এই লেখাটা আপনাদেরকে মালদ্বীপ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে এবং এমন একটা স্বপ্নীল গন্তব্য দেখার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
알াঢুলে স্সেলমো ইথেল ইন ফরমেশন
১. মালদ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়: সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক ও রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে, যা সমুদ্রের ক্রিয়াকলাপের জন্য আদর্শ।
২. ভিসা সংক্রান্ত তথ্য: মালদ্বীপে পর্যটকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা রয়েছে, যা ৯০ দিন পর্যন্ত বৈধ। তবে, আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
৩. স্থানীয় দ্বীপ বনাম রিসোর্ট: বাজেট বা অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে আপনি স্থানীয় দ্বীপে গেস্ট হাউসে থাকতে পারেন, অথবা বিলাসবহুল রিসোর্টে। স্থানীয় দ্বীপগুলো আপনাকে মালদ্বীপের সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি অনন্য ধারণা দেবে।
৪. পরিবেশবান্ধব পর্যটন: মালদ্বীপে ভ্রমণের সময় পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকুন। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমান, প্রবাল প্রাচীর স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন এবং সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করুন।
৫. অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্ব: মালদ্বীপের জিডিপির প্রায় ৬৮% পর্যটন খাত থেকে আসে। এটি কেবল দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই নয়, বরং অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও প্রধান উৎস।
জন্ত সরাংসা সারেত
মালদ্বীপের পর্যটন কেবল একটি আয়ের উৎস নয়, এটি তাদের সামগ্রিক উন্নয়নের একটি মডেল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে সুপরিকল্পিত নীতি, পরিবেশ সংরক্ষণ, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ, এবং স্থানীয় অর্থনীতির শক্তিশালীকরণ—এই চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মালদ্বীপের সাফল্য। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও তারা টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে, যা বিশ্বজুড়ে অন্য দেশগুলোর জন্য একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: মালদ্বীপের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পর্যটন খাত কীভাবে কাজ করে এবং এই আয় তারা কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে?
উ: আমি যখন মালদ্বীপের অর্থনীতি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলাম, তখন তো চোখ ছানাবড়া! ভাবুন তো, একটা ছোট্ট দেশের মোট আয়ের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশই আসে পর্যটন থেকে! এটা যেন তাদের অর্থনীতির ধমনীতে রক্ত সঞ্চালনের মতো। এই বিপুল আয় তারা বসে বসে দেখছে না, বরং দারুণ সব কাজে লাগাচ্ছে। যেমন ধরুন, তারা নিজেদের অবকাঠামো উন্নয়নে (রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর) বিনিয়োগ করছে, যার কিছুটা আমি নিজেও দেখেছি। ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা অনেক বাড়ানো হয়েছে, যা বছরে ৭.২ মিলিয়ন যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারে। এছাড়া, স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে তারা নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। আমার তো মনে হয়, তারা পর্যটকদের শুধু ‘টাকা তৈরির মেশিন’ হিসেবে দেখে না, বরং তাদের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করার পাশাপাশি নিজেদের সমাজের উন্নতিতেও মন দেয়। পর্যটন খাত থেকে প্রাপ্ত করের প্রায় ৯০% সরকারি রাজস্বে যোগ হয়। তারা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক ক্ষেত্রগুলোতেও এই আয় বিনিয়োগ করে, কারণ তারা জানে, একটি সুস্থ ও শিক্ষিত জাতিই দেশের আসল সম্পদ। পর্যটন সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে মালদ্বীপে অপরাধের মাত্রাও অনেক কম।
প্র: জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মালদ্বীপ তাদের পর্যটন আয় কীভাবে ব্যবহার করছে?
উ: মালদ্বীপের মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তন যে কতটা বড় হুমকি, তা আমার নিজের চোখেই দেখেছি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সৈকত ক্ষয়, প্রবাল ব্লিচিং—এগুলো তাদের অস্তিত্বের জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। তবে তারা দমে যাওয়ার পাত্র নয়!
তারা তাদের পর্যটন আয়কে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দারুণভাবে ব্যবহার করছে। আমি শুনেছি, তারা টেকসই পর্যটন উদ্যোগগুলোতে বিশাল বিনিয়োগ করছে, যেমন সৌরশক্তির ব্যবহার এবং উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। অনেক রিসোর্ট এখন তাদের বিদ্যুতের ৩০-৪০ শতাংশ চাহিদা সৌরশক্তি থেকে পূরণ করে। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো, তারা নতুন নতুন কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে এবং ভাসমান শহর বানানোর মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পও হাতে নিয়েছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করবে। তারা পরিবেশ সুরক্ষায় প্রচুর গবেষণা করছে এবং কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ ও প্রবাল প্রাচীর পুনরুদ্ধারের মতো কাজেও পর্যটন খাতের অর্থ ব্যবহার করছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পর্যটন মন্ত্রণালয়কে একত্রিত করে ‘পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়’ নাম দেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশ সুরক্ষায় তাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ।
প্র: পর্যটন খাত মালদ্বীপের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় কীভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে?
উ: আমরা যখন মালদ্বীপের বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর কথা ভাবি, তখন হয়তো ভাবি যে স্থানীয়দের লাভ কী? কিন্তু আমি নিজে দেখেছি, মালদ্বীপ সরকার এবং পর্যটন শিল্প স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বেশ সচেতন। ২০০৯ সালের একটি সরকারি নীতির পরিবর্তনের পর পর্যটকরা এখন স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করেছে। পর্যটন থেকে যে আয় হয়, তার একটি অংশ স্থানীয় দ্বীপগুলোর উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা তাদের আয় বাড়াতে সাহায্য করছে। অনেক স্থানীয় যুবক-যুবতী ট্যুরিজম সেক্টরে কাজ করে নিজেদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। স্থানীয় হস্তশিল্প ও খাবারের মতো ছোট ব্যবসাগুলোও পর্যটকদের কল্যাণে প্রসারিত হচ্ছে, যা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেও সাহায্য করছে। এছাড়া, পর্যটন খাতের বিনিয়োগ স্থানীয় অবকাঠামো, যেমন পরিবহন ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে, যা স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করেছে। আমার তো মনে হয়েছে, পর্যটন এখানে শুধু অর্থনীতির চাকা ঘোরায় না, বরং একটি সামগ্রিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে কাজ করে।






