মালদ্বীপের প্রাণবন্ত ধিভারু নাচ: এর অজানা রহস্য উন্মোচন করুন

webmaster

몰디브 전통 춤 디바루 - **Prompt:** A vibrant and authentic performance of the Maldivian Dhivehi Ruh dance on a moonlit beac...

আহ, মালদ্বীপ! নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্ফটিক স্বচ্ছ নীল জল আর সাদা বালির মায়াবী দৃশ্য, তাই না? কিন্তু শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, এই দ্বীপরাষ্ট্রের সংস্কৃতিতেও লুকিয়ে আছে এমন সব রত্ন, যা মন ছুঁয়ে যায়। এর মধ্যে একটি হলো তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘ধীভারু রুহ’। প্রথমবার যখন এই নাচ সম্পর্কে জানতে পারি, সত্যি বলতে, মনটা যেন অজানা এক সুরের টানে হারিয়ে গিয়েছিল। এই নাচ শুধু কিছু শারীরিক ভঙ্গি নয়, এটি মালদ্বীপের মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, তাদের পূর্বপুরুষদের গল্প আর সমুদ্রের সাথে তাদের আত্মিক বন্ধনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি ছন্দ, প্রতিটি পদক্ষেপে যেন দ্বীপের জীবন আর সংস্কৃতির গভীরতা অনুভব করা যায়। ভাবছেন কেমন হয় সেই নাচ, কী বার্তা বয়ে আনে তার প্রতিটি মুদ্রা?

চলুন, এই মন্ত্রমুগ্ধ করা ‘ধীভারু রুহ’ নাচ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিই।

ধীভারু রুহ এর মূল ভাব ও ইতিহাস

몰디브 전통 춤 디바루 - **Prompt:** A vibrant and authentic performance of the Maldivian Dhivehi Ruh dance on a moonlit beac...

সত্যি বলতে, মালদ্বীপের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য যখনই খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছি, তখনই মুগ্ধ হয়েছি। আর এই মুগ্ধতার এক বিশাল অংশ জুড়ে আছে ‘ধীভারু রুহ’ নামের এই ঐতিহ্যবাহী নাচ। নামের মধ্যেই যেন একটা গভীরতা আছে, তাই না? ‘ধীভারু’ মানে জেলে, আর ‘রুহ’ মানে আত্মা বা স্পন্দন। অর্থাৎ, জেলেদের আত্মা বা স্পন্দন। এটা শুধু একটা নাচ নয়, ভাইসব, এটা মালদ্বীপের জেলেদের জীবন, তাদের সংগ্রাম, আর সমুদ্রের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ভাবুন তো, বহু বছর আগে যখন এই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা কিছুই ছিল না, তখন সমুদ্রের বুকে মাছ ধরাটা কতটা কঠিন একটা কাজ ছিল! দিনের পর দিন অথৈ জলের মধ্যে কাটিয়ে দেওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করা – এই সবকিছুই যেন এই নাচের প্রতিটি ধাপে মিশে আছে। আমার মনে আছে, প্রথমবার যখন এর পেছনের গল্পটা শুনি, তখন থেকেই কেমন যেন একটা টান অনুভব করি। মনে হয়, যেন আমি নিজেও সেই জেলেদের সাথে সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলছি, তাদের আনন্দ-বেদনার ভাগীদার হচ্ছি। এই নাচ আসলে তাদের দৈনিক জীবনযাপন, মাছ ধরার পদ্ধতি, এবং সমুদ্র থেকে ফিরে আসার পর তাদের বিজয়োল্লাসের এক শৈল্পিক বহিঃপ্রকাশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্প বেঁচে আছে, আর এর মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের আত্মাও যেন নতুন করে প্রাণ পায়। আমি নিজে দেখেছি, যখন মালদ্বীপের গ্রামের দিকে কোনো উৎসবে এই নাচ পরিবেশিত হয়, তখন সেখানকার মানুষের চোখেমুখে এক অন্যরকম গর্ব আর আনন্দ দেখতে পাওয়া যায়। এটা কেবল দর্শক হিসেবে উপভোগ করা নয়, বরং তাদের সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার এক অসাধারণ অনুভূতি।

প্রাচীন মালদ্বীপের দৈনন্দিন জীবন

ধীভারু রুহ শুধু একটা পারফরম্যান্স নয়, এটা মালদ্বীপের প্রাচীন মানুষের জীবনযাত্রার একটা আয়না। যখনই এই নাচ দেখি, আমার কল্পনায় ভেসে ওঠে সেই দিনগুলো, যখন মালদ্বীপের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ভাবুন তো, ছোট্ট ছোট্ট কাঠের নৌকায় করে গভীর সমুদ্রে পাড়ি জমানো, তারপর দিনশেষে যখন মাছের ঝুড়ি ভর্তি করে জেলেরা ফিরতেন, তখন তাদের মুখে হাসি আর চোখে এক অন্যরকম ঝলক। এই নাচ সেইসব মুহূর্তগুলোকেই ধারণ করে। তারা কীভাবে জাল ফেলতেন, কীভাবে মাছ ধরতেন, বা প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে কীভাবে মানিয়ে চলতেন—এই সবকিছুরই একটা প্রতীকী উপস্থাপনা এই নাচের মধ্যে আছে। প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি হাতের ইশারা যেন বলে দেয় এক দীর্ঘদিনের গল্প। আমার মনে হয়, এই নাচ শুধু মনোরঞ্জনের জন্য নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে তাদের পূর্বপুরুষদের পরিশ্রম আর আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানানোর এক অসাধারণ মাধ্যম। এটা দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব অনুপ্রাণিত হই, কারণ এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের সংস্কৃতি কতটা সমৃদ্ধ আর আমাদের পূর্বপুরুষরা কতটা সংগ্রামী ছিলেন।

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সেতুবন্ধন

আশ্চর্যজনকভাবে, ধীভারু রুহ আজও মালদ্বীপের সংস্কৃতিতে তার সগৌরব অবস্থান ধরে রেখেছে। যদিও মালদ্বীপ এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, তবুও এই ঐতিহ্যবাহী নাচটি হারিয়ে যায়নি। বরং, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এটি আরও বেশি করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। আমি দেখেছি, অনেক সময় বড় বড় রিসোর্টগুলোতে যখন কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, তখন পর্যটকদের সামনে এই নাচ পরিবেশন করা হয়। এতে করে বিদেশীরাও মালদ্বীপের সত্যিকারের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। আর এই ব্যাপারটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়। কারণ, প্রায়শই দেখা যায় যে আধুনিকতার দাপটে অনেক পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে যায়, কিন্তু ধীভারু রুহের ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। এর কারণ হলো, মালদ্বীপের মানুষ তাদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে রাখতে জানে। তারা বোঝে যে তাদের ঐতিহ্যই তাদের পরিচয়। আর এই নাচের মাধ্যমে তারা তাদের সেই পরিচয়কে সগৌরবে তুলে ধরে। এটা যেন একটা জীবন্ত জাদুঘর, যেখানে অতীতের গল্পগুলো বর্তমানের সাথে হাত ধরাধরি করে পথ চলছে।

সমুদ্রের প্রতিচ্ছবি: ধীভারু রুহের ছন্দ

মালদ্বীপ মানেই সমুদ্র, আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে এখানকার মানুষের জীবন যেন ওতপ্রোতভাবে জড়ানো। ধীভারু রুহ নাচটা যখন দেখি, তখন যেন মালদ্বীপের উত্তাল সমুদ্র আর তার শান্ত রূপ—দুটোই একসঙ্গে অনুভব করতে পারি। এর ছন্দ, এর গতি—সবকিছুই সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে এমনভাবে মিলেমিশে যায় যে মনে হয় যেন স্বয়ং সমুদ্রই নাচছে। নর্তকরা যখন একসঙ্গে কোমর দুলিয়ে, হাত ঘুরিয়ে নাচে, তখন তাদের শরীরে যেন ঢেউয়ের আনাগোনা দেখতে পাই। এটা শুধু একটা দেখার বিষয় নয়, বরং অনুভব করার বিষয়। একবার এক স্থানীয় মালদ্বীপবাসী আমাকে বলছিলেন, এই নাচ নাকি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া এক বিশেষ উপহার, যা তাদের সমুদ্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এক মাধ্যম। আমি নিজে যখন দেখেছি, তখন দেখেছি নর্তকদের চোখেমুখে সেই গভীর শ্রদ্ধাবোধ। তাদের প্রতিটি নড়াচড়ায় যেন সমুদ্রের বিশালতা, তার রহস্য আর তার সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয়। এই নাচটা দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার আবেগাপ্লুত হয়েছি, কারণ এর মধ্যে এত গভীর একটা বার্তা লুকিয়ে আছে। এটা শুধু বিনোদন নয়, এটা একটা জাতির আত্মপরিচয় আর তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের এক শৈল্পিক দলিল। এই নাচের তালে তালে যেন আমি নিজেও মালদ্বীপের গভীর নীল জলে হারিয়ে যাই, আর ঢেউয়ের তালে তালে আমার মনটাও যেন নেচে ওঠে।

ঢেউয়ের তালে তালে শরীরী ভাষা

ধীভারু রুহের প্রতিটি নড়াচড়া সমুদ্রের ঢেউয়ের গতিকে নকল করে। নর্তকরা যখন হাত ওঠানাম করে বা শরীর দোলায়, তখন মনে হয় যেন ছোট ছোট নৌকা ঢেউয়ের ওপর দুলছে। আবার যখন তারা চক্রাকারে ঘোরে, তখন তা যেন ঘূর্ণিঝড়ের আগে সমুদ্রের উন্মত্ত রূপকে মনে করিয়ে দেয়। এই নাচের ভাষা এতটাই প্রতীকী যে, আপনি যদি মালদ্বীপের সমুদ্রের সাথে পরিচিত হন, তাহলে এর প্রতিটি মুদ্রা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন। আমি যখন প্রথমবার এটি দেখি, তখন কিছুটা হতবাক হয়েছিলাম, কারণ এত নিখুঁতভাবে প্রাকৃতিক একটি ঘটনাকে নাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সত্যিই অসাধারণ। আমার এক বন্ধু, যে কিনা পেশায় একজন চিত্রশিল্পী, সে এই নাচের প্রতিটি ভঙ্গিমা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিল যে সে তার নতুন ছবির অনুপ্রেরণা হিসেবে একে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এটা প্রমাণ করে যে, এই নাচের আবেদন কতটা গভীর এবং এর প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী। এটা শুধু এক ধরনের নৃত্যকলা নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত শিল্প যা প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

মৎস্য শিকারের প্রতীকী উপস্থাপনা

নাচের মধ্যে মৎস্য শিকারের বিভিন্ন ধাপও প্রতীকীভাবে দেখানো হয়। যেমন, জাল ফেলা, মাছ ধরা, এমনকি নৌকা চালিয়ে ফিরে আসার আনন্দও এই নাচের অংশ। এটা এতটাই বাস্তবসম্মত মনে হয় যে, দেখে মনে হয় যেন আপনি নিজেই সেইসব জেলেদের সাথে সমুদ্রের বুকে আছেন। আমার মনে আছে, একবার একজন বয়স্ক নর্তককে দেখেছিলাম, যিনি এতটাই জীবন্তভাবে এই অংশটি পরিবেশন করছিলেন যে মনে হচ্ছিল যেন তিনি সত্যি সত্যি মাছ ধরছেন। তার চোখেমুখে ছিল সেই পরিশ্রমের ছাপ, আবার মাছ ধরার পর যে আনন্দ, সেটাও ফুটে উঠছিল দারুণভাবে। এই নাচ দেখে আমি উপলব্ধি করেছি যে, সংস্কৃতি কীভাবে মানুষের জীবনযাত্রাকে ধারণ করে। এটা শুধু অতীতের কোনো ঘটনাকে মনে করিয়ে দেওয়া নয়, বরং তাকে জীবন্ত করে তোলা। এই শিল্পকর্মটি দেখে আমি সত্যিই বুঝতে পারি যে মালদ্বীপের মানুষ তাদের জীবনের প্রতিটি অংশকে, এমনকি তাদের কঠিন পরিশ্রমকেও, কীভাবে শিল্পের মাধ্যমে উদযাপন করে। এটি আমাকে শেখায় যে জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকেও কতটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়।

Advertisement

নর্তকদের পোশাক ও বাদ্যযন্ত্রের গল্প

ধীভারু রুহ নাচটা শুধু তার ছন্দ বা ভঙ্গিমার জন্যই নয়, এর পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রও সমানভাবে আকর্ষণীয়। প্রথমবার যখন নর্তকদের দেখি, তাদের সাধারণ কিন্তু ঐতিহ্যবাহী পোশাক দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। পোশাকগুলো সাধারণত হালকা এবং আরামদায়ক হয়, যা নর্তকদের সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ সময় পুরুষরা লুঙ্গির মতো এক ধরনের পোশাক পরেন, যা ‘মুন্ডু’ নামে পরিচিত, আর সাথে থাকে একটি সাধারণ শার্ট। অন্যদিকে, মহিলারা পরেন লম্বা, রঙিন পোশাক, যা মালদ্বীপের উজ্জ্বল আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মানানসই। আমার মনে হয়, এই পোশাকগুলো তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে, যা তাদের নাচের গভীরতা বাড়িয়ে তোলে। আমি একবার একজন নর্তকীর সাথে কথা বলেছিলাম, তিনি বলছিলেন যে এই পোশাকগুলো তাদের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানানোর একটি উপায়, এবং এটি তাদের নাচের সময় এক বিশেষ শক্তি যোগায়। পোশাকের রং, ডিজাইন—সবকিছুই মালদ্বীপের প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত। যেমন, নীল রং সমুদ্রের প্রতিনিধিত্ব করে, আর সাদা রং শান্তির প্রতীক। এই সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো মিলে ধীভারু রুহকে কেবল একটি নাচ না রেখে একটি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতায় পরিণত করে।

ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সরলতা ও সৌন্দর্য

ধীভারু রুহের পোশাকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর সরলতা। কোনো বাড়তি জাঁকজমক বা কৃত্রিমতা নেই, যা আধুনিক পোশাকে প্রায়শই দেখা যায়। কিন্তু এই সরলতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক গভীর সৌন্দর্য। পুরুষ নর্তকদের ‘মুন্ডু’ এবং মহিলাদের রঙিন ‘ফেহি রেম্বো’ বা ‘ধাগু’ নামক পোশাক তাদের স্থানীয় কারুশিল্পের নিদর্শন। এই পোশাকগুলো হাতে তৈরি হয় এবং প্রায়শই স্থানীয় নকশা বা সামুদ্রিক প্রতীক দিয়ে সজ্জিত থাকে। আমি যখন এই পোশাকগুলো কাছ থেকে দেখি, তখন হাতের কাজের সূক্ষ্মতা দেখে অবাক হয়েছিলাম। এই পোশাকগুলো শুধু নাচের জন্য নয়, এটি মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমার মনে হয়, এই সরলতাই এই নাচের প্রতি আমাকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে। কারণ, এটি প্রমাণ করে যে সৌন্দর্য সবসময় জাঁকজমকপূর্ণ না হয়েও কতটা শক্তিশালী হতে পারে। এই পোশাকগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে যেন আমি মালদ্বীপের ইতিহাসের এক জীবন্ত পৃষ্ঠাকে স্পর্শ করছি, যা আমাকে তাদের সংস্কৃতিকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

নাচের সঙ্গী: বাদ্যযন্ত্রের ভূমিকা

ধীভারু রুহ নাচের সাথে বাজানো বাদ্যযন্ত্রগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই বাদ্যযন্ত্রগুলো নাচের ছন্দ আর মেজাজ নির্ধারণ করে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ‘বোদু বেরু’ নামক একটি বড় ড্রাম, যা প্রায়শই হাত দিয়ে বাজানো হয়। এর শক্তিশালী ধ্বনি নাচের একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করে। এছাড়াও, ছোট ড্রাম, তালি এবং বাঁশির মতো বাদ্যযন্ত্রও ব্যবহৃত হয়। আমি যখন এই ড্রামের আওয়াজ শুনি, তখন আমার বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা কম্পন অনুভব করি। এটা শুধু একটা আওয়াজ নয়, এটা যেন পূর্বপুরুষদের আত্মার ডাক, যা নাচের মাধ্যমে নতুন জীবন পায়। এই বাদ্যযন্ত্রগুলো স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়, যা মালদ্বীপের কারুশিল্পের আরেকটা পরিচয় বহন করে। এই যন্ত্রগুলো দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে বুঝতে পারি যে, একটি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কিভাবে প্রতিটি উপাদান একে অপরের সাথে মিলেমিশে কাজ করে। আমি নিচে একটি সারণীতে ধীভারু রুহের কিছু প্রধান বাদ্যযন্ত্র এবং তাদের ভূমিকা তুলে ধরছি:

বাদ্যযন্ত্রের নাম বর্ণনা ভূমিকা
বোদু বেরু বড় ড্রাম, চামড়া দিয়ে ঢাকা নাচের প্রধান ছন্দ এবং তাল প্রদান করে, শক্তিশালী ধ্বনি তৈরি করে
থাারা ছোট ড্রাম, বোদু বেরুর চেয়ে ছোট সহায়ক ছন্দ এবং সূক্ষ্ম তাল যোগ করে
দাঁডি কাঠের লাঠি, কখনও কখনও ধাতব তালি বাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, নাচের গতি বাড়ায়
ভেরী শঙ্খ বা বিশেষ ধরনের শাঁখ বিশেষ অনুষ্ঠান বা শুরুর আগে প্রতীকী শব্দ তৈরি করে

আধুনিক মালদ্বীপে ধীভারু রুহের প্রভাব

আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে যখন অনেক ঐতিহ্যবাহী শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে, তখন ধীভারু রুহ মালদ্বীপের সংস্কৃতিতে তার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। আধুনিক মালদ্বীপ, যা কিনা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, সেখানেও এই ঐতিহ্যবাহী নাচ তার গুরুত্ব হারায়নি। বরং, এর আবেদন দিন দিন বাড়ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, কিভাবে বড় বড় রিসোর্টগুলো তাদের গেস্টদের জন্য এই নাচের আয়োজন করে, যাতে তারা মালদ্বীপের সত্যিকারের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। এই নাচের মাধ্যমে পর্যটকরা শুধু বিনোদনই পান না, বরং মালদ্বীপের মানুষের জীবনধারা, তাদের ইতিহাস এবং সমুদ্রের সাথে তাদের আত্মিক বন্ধন সম্পর্কেও জানতে পারেন। এটা শুধু একটা প্রদর্শন নয়, এটা একটা শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতাও বটে। আমার মনে হয়, এই নাচ মালদ্বীপের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং এর মাধ্যমে তারা বিশ্ব দরবারে তাদের ঐতিহ্যকে সগৌরবে তুলে ধরছে। এই নাচের মাধ্যমে মালদ্বীপের মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং নতুন প্রজন্মকে তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আমি বিশ্বাস করি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মালদ্বীপের মানুষ তাদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ধীভারু রুহ তার আলো ছড়াতে থাকবে।

পর্যটন শিল্পে ধীভারু রুহের গুরুত্ব

পর্যটন মালদ্বীপের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, আর ধীভারু রুহ এই শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। পর্যটকরা মালদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসে ঠিকই, কিন্তু তারা স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে আগ্রহী হয়। আর ধীভারু রুহ সেই সুযোগটা দেয়। আমি বহু পর্যটককে দেখেছি যারা এই নাচ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং মালদ্বীপের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেক রিসোর্ট এমনকি গেস্টদের জন্য ধীভারু রুহ নাচের কর্মশালার আয়োজন করে, যেখানে তারা নাচের মৌলিক পদক্ষেপগুলো শিখতে পারে। আমার মনে আছে, একবার এক বিদেশী দম্পতি আমাকে বলেছিলেন যে, এই নাচের অভিজ্ঞতা তাদের মালদ্বীপ ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলেছে। তাদের চোখেমুখে যে আনন্দ আর মুগ্ধতা দেখেছিলাম, তা সত্যিই অসাধারণ। এটা প্রমাণ করে যে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কিভাবে পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে পারে এবং একটি দেশের আসল সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে পারে। ধীভারু রুহকে সঠিকভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে মালদ্বীপ কেবল তাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখছে না, বরং বিশ্বজুড়ে তাদের সাংস্কৃতিক দূত হিসেবেও কাজ করছে।

সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্ম

몰디브 전통 춤 디바루 - **Prompt:** A dynamic tableau illustrating the Maldivian Dhivehi Ruh dance as a symbolic representat...

ধীভারু রুহ শুধুমাত্র একটি পারফরম্যান্স নয়, এটি মালদ্বীপের সাংস্কৃতিক সংরক্ষণেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরুণ প্রজন্মকে এই নাচ শেখানো হয়, যাতে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হয়। আমি দেখেছি কিভাবে স্কুলের বাচ্চারা আগ্রহ নিয়ে এই নাচ শেখে এবং উৎসবগুলোতে পরিবেশন করে। এটি তাদের মধ্যে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ তৈরি করে। আমার মতে, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ যেকোনো জাতির পরিচয় তার সংস্কৃতিতে লুকিয়ে থাকে। যদি নতুন প্রজন্ম তাদের ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে সেই সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ধীভারু রুহের মাধ্যমে মালদ্বীপের নতুন প্রজন্ম তাদের শিকড়ের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারছে। এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগে, কারণ এর মাধ্যমে আমি ভবিষ্যতের জন্য আশা দেখতে পাই যে, এই সুন্দর ঐতিহ্য আরও বহু বছর ধরে টিকে থাকবে। এটি নিশ্চিত করে যে মালদ্বীপের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সজীব থাকবে এবং বিশ্ব মঞ্চে তাদের অনন্য পরিচয় তুলে ধরবে।

Advertisement

আমার চোখে দেখা ধীভারু রুহের এক ঝলক

আমি যখন প্রথমবার মালদ্বীপ ভ্রমণ করি, তখন থেকেই এখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার একটা তীব্র ইচ্ছা ছিল। আর সেই ইচ্ছার ফলস্বরূপই একদিন সুযোগ এলো ধীভারু রুহ নাচ সরাসরি দেখার। সত্যি বলতে, টেলিভিশনে বা ইন্টারনেটে ভিডিও দেখে যা বুঝেছিলাম, তার চেয়েও অনেক বেশি জীবন্ত আর প্রাণবন্ত ছিল সরাসরি দেখার অভিজ্ঞতা। আমি যখন ভিড়ের মাঝে বসে সেই নাচ দেখছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন আমি সময়ের পিছন দিকে চলে গেছি, আর মালদ্বীপের প্রাচীন জেলেদের সাথে আমি নিজেও মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠেছি। নর্তকদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি হাত ঘোরানো—সবকিছুই ছিল এতটাই নিখুঁত আর আবেগপূর্ণ যে, আমি আমার চোখ সরাতে পারছিলাম না। বিশেষ করে, যখন তারা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো কোমর দোলাচ্ছিল, তখন আমার মনে হচ্ছিল যেন আমার সামনেই উত্তাল সমুদ্র বয়ে চলেছে। সেই সন্ধ্যায় যে অনুভূতি হয়েছিল, তা আমি আজও ভুলতে পারিনি। সেদিনের সেই অভিজ্ঞতা আমার মালদ্বীপ ভ্রমণকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। আমি নিশ্চিত, যারা এই নাচ একবার দেখেছেন, তাদের সবার মনেই একটা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এই ধীভারু রুহ। এটা শুধু একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটা এক ধরনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, যা আপনাকে মালদ্বীপের হৃদয়ের গভীরে নিয়ে যাবে।

একটি স্মরণীয় সন্ধ্যার কথা

আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেই সন্ধ্যাটি ছিল ভরা পূর্ণিমার রাত। সমুদ্রের পাড়ে বিশাল এক খোলা মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছিল ধীভারু রুহ। মৃদু সমুদ্রের বাতাস আর চাঁদের আলো—সবকিছু মিলে এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। যখন নর্তকরা মঞ্চে এলেন, তখন তাদের চোখেমুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি আর দৃঢ়তা দেখতে পেয়েছিলাম। তারা নাচ শুরু করতেই যেন পুরো পরিবেশটাই পাল্টে গেল। বোদু বেরুর তালে তালে তাদের পদচারণা আর হাতের ভঙ্গি এতটাই সাবলীল ছিল যে, মনে হচ্ছিল যেন তারা কোনো পূর্বপরিকল্পিত ছন্দে নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের আত্মার ভাষা প্রকাশ করছে। আমি এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম যে, কখন যে প্রায় এক ঘণ্টা কেটে গিয়েছিল, তা টেরই পাইনি। অনুষ্ঠান শেষে যখন নর্তকরা দর্শকদের অভিবাদন জানাচ্ছিলেন, তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম এমন একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য। আমার বিশ্বাস, এই ধরনের অভিজ্ঞতা শুধু মনোরঞ্জনই করে না, বরং মানুষের মনকে সমৃদ্ধ করে এবং ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি করে। সেদিন আমি অনুভব করেছিলাম যে, সংস্কৃতি কত শক্তিশালী হতে পারে এবং কিভাবে এটি মানুষকে একত্রিত করতে পারে।

নাচের গভীরে লুকিয়ে থাকা গল্প

ধীভারু রুহের প্রতিটি মুদ্রার পেছনেই যেন একটা গল্প লুকিয়ে আছে। কিছু ভঙ্গি মাছ ধরার পদ্ধতিকে ফুটিয়ে তোলে, কিছু ভঙ্গি সমুদ্রের বিপদকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে, আবার কিছু ভঙ্গি মাছ ধরার পর প্রাপ্তির আনন্দকে প্রকাশ করে। আমি যখন এই নাচের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে পরে স্থানীয় একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে জানতে পারলাম, তখন আমার মুগ্ধতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তিনি আমাকে বলছিলেন যে, কীভাবে প্রতিটি ছোট ছোট নড়াচড়ারও একটি নির্দিষ্ট অর্থ আছে এবং কিভাবে এই সব অর্থগুলো মিলে মালদ্বীপের জেলেদের জীবনের একটি সম্পূর্ণ চিত্র তৈরি করে। এটা শুনে আমি বুঝতে পারলাম যে, এই নাচ কেবল একটা শারীরিক প্রদর্শনী নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত ইতিহাস গ্রন্থ। এই নাচ দেখলে আপনি শুধু কিছু পদক্ষেপ বা নড়াচড়া দেখবেন না, আপনি দেখবেন মালদ্বীপের আত্মা, তাদের শত শত বছরের ঐতিহ্য আর সমুদ্রের সাথে তাদের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। আমার মনে হয়েছে, এই গভীরতা এবং storytelling ক্ষমতা এই নাচকে অন্য যেকোনো সাধারণ নাচ থেকে আলাদা করে তুলেছে। এই নাচের প্রতিটি পরতে পরতে যেন মালদ্বীপের আত্মকাহিনীর এক নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়।

পর্যটকদের জন্য ধীভারু রুহ: এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা

আপনি যদি মালদ্বীপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে ধীভারু রুহ নাচ দেখা আপনার তালিকার শীর্ষে থাকা উচিত। আমি একজন ভ্রমণ উৎসাহী হিসেবে বলতে পারি, এই নাচ দেখা আপনার মালদ্বীপ অভিজ্ঞতাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কারণ, এটা শুধু একটা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করা নয়, বরং মালদ্বীপের সাংস্কৃতিক হৃদয়ের সাথে একাত্ম হওয়া। প্রথমবার যখন আমি এই নাচ দেখেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল যেন মালদ্বীপের আসল সৌন্দর্য আর ঐতিহ্য আমার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। শুধু সমুদ্রের নীল জল আর সাদা বালিই নয়, এই নাচ আপনাকে মালদ্বীপের মানুষের উষ্ণতা আর তাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। বেশিরভাগ বড় রিসোর্ট এবং হোটেলগুলোতে রাতের বেলা এই নাচের আয়োজন করা হয়, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বা কোনো বিশেষ উৎসবে। এছাড়াও, স্থানীয় দ্বীপগুলোতেও অনেক সময় এই নাচ পরিবেশিত হয়, যেখানে আপনি আরও খাঁটি অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। আমি দেখেছি, পর্যটকরা এই নাচ দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে তারা নিজেদের ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করা শুরু করেন, এমনকি অনেকেই নর্তকদের সাথে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন! এই অভিজ্ঞতা এতটাই আনন্দদায়ক যে এটি আপনার মালদ্বীপ ভ্রমণকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে, আর আপনি ফিরে আসার পরেও এর স্মৃতি আপনার মনে লেগে থাকবে।

কোথায় এবং কখন দেখা যাবে?

মালদ্বীপের প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্রেই ধীভারু রুহ নাচের আয়োজন করা হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি কোনো স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ফোক ফেস্টিভ্যাল চলাকালীন মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন, কারণ তখন আপনি এই নাচের সবচেয়ে খাঁটি রূপ দেখতে পারবেন। অনেক রিসোর্ট প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার এই নাচের আয়োজন করে। আপনার হোটেলের রিসেপশনে জিজ্ঞেস করলে তারা আপনাকে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে। আমি যখন গিয়েছি, তখন রিসোর্টগুলোয় আগাম শিডিউল জেনে নিয়েছিলাম। তবে স্থানীয় দ্বীপগুলো যেমন মাফুশি বা ধিধুতেও এই ধরনের নাচ দেখার সুযোগ থাকে, যা পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হতে পারে। রাতের বেলা সাধারণত এই নাচ পরিবেশিত হয়, কারণ দিনের বেলায় জেলেরা তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সন্ধ্যা নামলেই যেন উৎসবের আমেজ শুরু হয়, আর তার মাঝেই ধীভারু রুহের ছন্দ নতুন করে প্রাণ পায়। আমি সবসময় পরামর্শ দেবো যে, যদি সম্ভব হয়, তাহলে কোনো স্থানীয় উৎসবে যোগ দিন, কারণ সেখানে আপনি কেবল নাচই নয়, মালদ্বীপের মানুষের আসল জীবনযাত্রাও খুব কাছ থেকে দেখতে পাবেন।

স্মৃতি ধরে রাখার টিপস

ধীভারু রুহ নাচের অভিজ্ঞতা এতটাই অসাধারণ যে, আপনি চাইবেন এর প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করতে। ছবি তোলার সময় খেয়াল রাখবেন যেন নর্তকদের কোনো সমস্যা না হয় এবং তাদের ব্যক্তিগত পরিসর বজায় থাকে। ভিডিও করার সময় নাচের প্রতিটি ছন্দ আর নর্তকদের আবেগপূর্ণ অভিব্যক্তি ক্যামেরাবন্দী করার চেষ্টা করুন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শুধুমাত্র ভিডিওতে রেকর্ড করলেই হয় না, এই নাচের অনুভূতিটাকে মনের মধ্যেও ধরে রাখাটা জরুরি। চেষ্টা করুন নাচের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে, তাদের আবেগের সাথে একাত্ম হতে। আর যদি সম্ভব হয়, তাহলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলুন, এই নাচ সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে গল্প শুনুন। আমি যখন এমনটা করেছিলাম, তখন আমার অভিজ্ঞতাটা আরও গভীর হয়েছিল। তারা এই নাচের পেছনের অনেক অজানা গল্প আর অর্থ আমাকে বলেছিলেন, যা আমি অন্য কোথাও খুঁজে পেতাম না। এসব ছোট ছোট জিনিসগুলোই আপনার মালদ্বীপ ভ্রমণকে এবং ধীভারু রুহ দেখার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে এবং আপনার মনে এক অমলিন স্মৃতি হিসেবে রয়ে যাবে।

Advertisement

글을 마치며

ধীভারু রুহ নিয়ে এতক্ষণ যা লিখলাম, তা হয়তো এই অসাধারণ শিল্পের গভীরতাকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরতে পারেনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, এর মাধ্যমে আপনারা মালদ্বীপের এই প্রাণবন্ত ঐতিহ্যের এক ঝলক দেখতে পেয়েছেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, এই নাচ কেবল এক ধরনের বিনোদন নয়, এটি মালদ্বীপের মানুষের আত্মপরিচয়, তাদের সমুদ্রের প্রতি ভালোবাসা আর তাদের পূর্বপুরুষদের সংগ্রাম ও সাফল্যের এক জীবন্ত দলিল। এটি এমন এক অভিজ্ঞতা যা শুধু চোখ দিয়েই নয়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। আমার আশা, আমার এই লেখা আপনাদের মালদ্বীপ ভ্রমণের তালিকায় ধীভারু রুহকে অন্তর্ভুক্ত করতে অনুপ্রাণিত করবে, কারণ এটি সত্যিই এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে।

알아두면 쓸모 있는 정보

মালদ্বীপ ভ্রমণের সময় এই ধরনের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো:

1. স্থানীয় রিসোর্ট বা হোটেলে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার সময়সূচী আগে থেকে জেনে নিন। অনেক সময় এটি সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আয়োজন করা হয়।

2. স্থানীয় দ্বীপগুলোতেও ধীভারু রুহ দেখার সুযোগ থাকে, যা আপনাকে আরও খাঁটি অভিজ্ঞতা দিতে পারে। সেখানকার কমিউনিটি সেন্টার বা লোকাল কাউন্সিলে খোঁজ নিতে পারেন।

3. নর্তকদের ছবি বা ভিডিও তোলার সময় তাদের সম্মান বজায় রাখুন এবং তাদের ব্যক্তিগত পরিসরে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

4. যদি সুযোগ হয়, তাহলে এই নাচ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলুন। তাদের কাছ থেকে এর ইতিহাস ও গল্প জানতে পারলে আপনার অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।

5. কেবল ধীভারু রুহ নয়, মালদ্বীপের অন্যান্য লোকনৃত্য যেমন ‘ব্যান্ডি’, ‘ল্যাংগিরি’ বা ‘ফানহিতাহ’ সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করুন।

Advertisement

중요 사항 정리

সবশেষে, ধীভারু রুহ মালদ্বীপের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অমূল্য রত্ন। এটি কেবল একটি নাচ নয়, বরং এটি মালদ্বীপের জেলেদের জীবন, তাদের সমুদ্রের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক এবং তাদের সংগ্রামের এক শৈল্পিক অভিব্যক্তি। এর প্রতিটি ছন্দ, প্রতিটি ভঙ্গি বহন করে পূর্বপুরুষদের গল্প আর নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। আধুনিক মালদ্বীপেও এটি তার আবেদন হারায়নি, বরং পর্যটকদের কাছে এটি এক বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা মালদ্বীপের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাদের ইতিহাস ও মূল্যবোধ তুলে ধরার এক চমৎকার মাধ্যম।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: এই ‘ধীভারু রুহ’ নাচটি আসলে কী, আর এর মূল ভাবনাটা কী?

উ: ‘ধীভারু রুহ’ নামটি শুনলেই যেন মালদ্বীপের সমুদ্র আর তার গভীরতা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এটা কেবল একটা নাচ নয়, এটা যেন মালদ্বীপের আত্মজীবনী। আসলে, ‘ধীভারু রুহ’ বলতে দ্বীপবাসীদের জীবন, সমুদ্রের সাথে তাদের সম্পর্ক, আর তাদের পূর্বপুরুষদের গল্পগুলোকেই বোঝায়। যখন এই নাচ দেখি, মনে হয় যেন একদল মানুষ একসঙ্গে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে গাইছে আর নাচছে। এই নাচের মাধ্যমে তারা প্রকৃতির প্রতি তাদের সম্মান আর দ্বীপের জীবনযাত্রার আনন্দকে তুলে ধরে। প্রতিটি পদক্ষেপ আর হাত নাড়ার ভঙ্গিতে তাদের দৈনন্দিন জীবন, মাছ ধরা, উৎসব আর ভালোবাসার গল্পগুলো ফুটে ওঠে। এটা সত্যি একটা দেখার মতো ব্যাপার, যা আপনাকে মালদ্বীপের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।

প্র: এই নাচের বিশেষত্বগুলো কী কী? কেমন তার পোশাক, সুর আর পরিবেশ?

উ: যখন আমি প্রথমবার ‘ধীভারু রুহ’ নাচ দেখেছিলাম, এর জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক আর প্রাণবন্ত সুর আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এই নাচের শিল্পীরা সাধারণত উজ্জ্বল রঙের, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে থাকেন, যা সমুদ্রের রঙ আর মালদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। পুরুষরা প্রায়শই ঢিলেঢালা সাদা শার্ট এবং স্থানীয় লুঙ্গি পরেন, আর মহিলারা রঙিন পোশাকের সাথে সুন্দর গহনা ব্যবহার করেন। নাচের মূল সুর আসে বদু বেরুর (Bodu Beru) মতো বড় ড্রাম থেকে, যার গভীর ও ছন্দময় আওয়াজ আপনার মনকে মুহূর্তে আন্দোলিত করবে। সাথে থাকে আরও কিছু স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র, যা নাচে এক অন্যরকম মাত্রা যোগ করে। পরিবেশটা হয় একেবারে উৎসবমুখর; দ্বীপের উন্মুক্ত স্থানে, চাঁদের আলোয় বা সন্ধ্যায় ফায়ারলাইটের পাশে এই নাচ যখন পরিবেশিত হয়, তখন মনে হয় যেন সময়টা থমকে গেছে। প্রতিটি ছন্দ, প্রতিটি পদক্ষেপে শিল্পীদের আবেগ আর উদ্দীপনা স্পষ্ট বোঝা যায়, যা আমাকে এক অদেখা জগতে নিয়ে গিয়েছিল।

প্র: মালদ্বীপে এই ‘ধীভারু রুহ’ নাচের গুরুত্ব কতটা, আর আমরা এটা কোথায় দেখতে পারি?

উ: মালদ্বীপের সংস্কৃতিতে ‘ধীভারু রুহ’ নাচের গুরুত্ব অপরিসীম। এটা কেবল একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নয়, বরং মালদ্বীপের ঐতিহ্য আর পরিচয়কে বাঁচিয়ে রাখার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমার মনে হয়েছে, এই নাচ তাদের সামাজিক বন্ধনকে আরও মজবুত করে, নতুন প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পর্যটকদের জন্যেও এটা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। আপনি মালদ্বীপের অনেক রিসোর্টেই সন্ধ্যাবেলায় বা বিশেষ অনুষ্ঠানে এই নাচের পরিবেশনা দেখতে পাবেন। এছাড়া, স্থানীয় দ্বীপগুলোতে বিভিন্ন উৎসব বা সাংস্কৃতিক আয়োজনেও এর দেখা মেলে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে এই নাচ পরিবেশন করে, সেই দৃশ্যটা অসাধারণ। এটা শুধু দেখা নয়, অনুভব করার মতো একটি অভিজ্ঞতা, যা মালদ্বীপ ভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় অংশ হয়ে থাকে।